Motorpsycho Nightmare [Bengali translation]
Motorpsycho Nightmare [Bengali translation]
কলকাতা থেকে কতদিন থেকে
চলেই চলেছি আমি ।
এখন অনেক রাত হয়ে গেছে
এখানে একটু থামি ।
ওই দ্যাখা যায় জানালায় আলো,
হঠাৎ খামার বাড়ি ।
গতকাল ঘুম হয়নি আমার-
দরোজায় কড়া নাড়ি ।
দরোজাটা খুলে বেরিয়ে যে আসে,
হাতে তার রাম দা’ !
মারমুখো তার ভঙ্গিটি আর
আমার আমতা আমতা ।
রামদা’ ঠেকিয়ে আমার বুকে সে
বলে ভয়ানক স্বরে
‘বাছাধন,আমি কোথায় তোমাকে
দেখেছি যে মনে পড়ে ।
তুমি রাজনীতি করো মনে হয়,
বাম দিকে যেন ঝোঁক’।
ঢোক গিলে আমি বলি তাড়াতাড়ি,
‘ভুল করছেন লোক !
আমি তো পথিক,আমার এছাড়া
পরিচয় কিছু নেই’।
দু’চোখ নাচিয়ে উঁকি দেয় মেয়ে
জাহানারা তার নাম ।
যেন সিনেমার পর্দায় আমি
চম্পাকে দেখলাম ।
তার দিকে চোখ রেখে আমি তার
বাবাকে তোয়াজ করি-
‘এত সুন্দর আপনার বাড়ি !
মরে যাই !মরি মরি’ !
বাবা বলে ,’থামো, তুমি তো পথিক !
বাড়ির তুমি কি জানো’ !
বললাম,’আমি কবিতাই লিখি
সুরে বসালে তা গানও’ ।
আমার নখেঁর নিচে যে ময়লা
কসম দিচ্ছি তার-
দেখলাম যেন মনটি নরোম
হয়ে এলো এইবার ।
‘মনে হয় তুমি ক্লান্ত ভীষণ
ঠিক আছে এসো ঘরে ।
‘বিছানাটি পাবে ঘুমোবার,তবে
এই শর্তেই শুধু-
বিছানাই পাবে,চেয়ে বসবে না
তামাকের সাথে দুদু’।
ইশারাটি খুব আবছা তো নয়-
সরে যায় জাহানারা ।
‘সকালে উঠিবে,গাইটি দোয়াবে-
বিছানার এই ভাড়া’।
শুয়ে পড়তে না পড়তেই ঘুম
ভেঙ্গে এলো দুই চোখ ।
আমি গতকাল ঘুমোতে পারিনা
নিহত দিনের শোকে ।
হঠাৎ কী হলো ?ঘরে কৈউ এলো ?
চেয়ে দেখি জাহানারা ।
অমাবস্যার রজনীতে যেন
খসে পড়া এক তারা ।
‘পথিক,তুমি কি গোসল করবে ?
সারা গায়ে কি যে ধুলো ‘!
হেসে বললাম,’ধুলো বলছো কি !
বন্ধু যে ওইগুলো’।
‘ধুলো বুঝি হয় বন্ধু কখোন’ ?
জাহানারা হেসে ওঠে ।
আমিতো চাঁদের উদয় দেখেছি
কতবার কত ঠোঁটে ।
এ জীবন যানি অমাবস্যার
এক টানা এক রাত ।
কোনদিন যদি দিন আসে তবে
হতে পারে সাক্ষাত ।
বেদানার মতো লাল দানাগুলো
ফেটে ফেটে পড়ে যায় ।
নিঃশ্বাস ফেলে পাশ ফিরে আমি
ডুবে যাই বিছানায় ।
ভোর হয়ে যায়,মনে পড়ে যায়
গাই দুইতে যে হবে !
বাবা বলে,’আরে, অদ্ভুত এ তো !
কথা কে রেখেছে কবে !
নিশ্চয় এটি বদ্ধ পাগল !
ভাগ্যে খ্যাপেনি রাতে
বললাম আমি,’এখনো অনেক
খবর রয়েছে হাতে ‘।
‘কি রকম শুনি ?’প্রশ্ন বাবার
মুখখানা হাসি হাসি ।
‘যেমন ধরুন ফিদেল কাস্ত্রো
তাকে বড় ভালবাসি ।‘
বলেই আমি তো বিদ্যুৎ বেগে
সরে যাই,দেখি বাবা
কাস্ত্রোর নাম হতে না হতেই
তুলছে বিশাল থাবা ।
থাবা মানে থাবা !বাঘের সে থাবা ।
সরে গেছি এক পাশে ।
নেমে আসে থাবা,ভাঙ্গে আলমারি,
জাহানারা খুব হাসে ।
‘হারামির হাড় !পথিক সেজেছো !
কুমনিস্ট তুমি শালা ।
পৈতৃক প্রাণ খোয়াতে না হলে
ব্যাটা এক্ষুনি পালা ।‘
পালা মানে পালা !চোখের পলকে
হাজার মিটার পার ।
দৌড় বাজিতে আমার চেয়ে কে
বাহাদুর খোলোয়াড় !
বহুদূর থেকে ভাংচুর শুনি-
ভাঙে জানালার কাচ ।
মড়মড় করে ভেঙে পড়ে যায়
খামার বাড়ির গাছ ।
জাহানারা ডাকে চিৎকার করে
‘ফিরে এসো, উন্মাদ।‘
অমাবস্যার দীর্ঘ রজনী ।
ফিরবে যে কবে চাঁদ ?
আমি ফিরবো না,এইটুকু জানি
মাড়াবো না ওই পাড়া ।
গার্মেন্টসে চাকরিতে আছে
আজকাল জাহানারা ।
এখনো বাবার থাবাটি শক্ত,
রামদা’য়ে বড় ধার ।
ধড় থেকে মাথা আলাদা করবে
দেখা পেলে একবার ।
লোকে বলে তাকে –‘রাগ হবে সে তো
আমাদের ও রাগ হয় ।
দাড়ি থাকলেও ফিদেল কাস্ত্রো
মুসমান তো নয় ।
তবে ওই কবি,ওই যে পথিক –
ওরা আরো ভয়ানক ।
‘হাতে যে কলম দেখছো ওদের-
আসলে বাঘের নখ ।‘
এখনো সে আছে ভয়ানক রেগে
খামার বাড়িতে একা –
পৃথিবীতে কত খামার বাড়িতে
পাবে তুমি তার দ্যাখা ।
তোমাকে তাড়িয়ে পথে যে নামায়
কোটি কোটি হয় তারা ।
তোমার জন্য একটিই বাড়ি
একটিই জাহানারা ।
তোমার জন্য একটিই চাওয়া-
কবিতা একটি এই;
কথা বলার স্বাধিনতা ,
তার কোন বিকল্প নেই ।
- Artist:Bob Dylan
- Album:Another Side of Bob Dylan (1964)